ব্রাজিল ও সেনেগালের মধ্যকার আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচটি শুরু থেকেই দুই দলের টেকনিক্যাল লড়াইয়ে জমে উঠেছিল। ব্রাজিল বল দখল ও পাসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে আক্রমণ গড়েছে, অপরদিকে সেনেগাল চেষ্টা করেছে দ্রুত পাল্টা আক্রমণে ওঠার। তবে ম্যাচের প্রথমার্ধেই দুই দৃষ্টিনন্দন গোল করে ব্রাজিল নিশ্চিত করে নেয় ম্যাচের মোড়। দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করলেও আর কোনো দলই গোলের দেখা পায়নি। শেষ পর্যন্ত প্রথমার্ধের দুই গোলেই ম্যাচের নিষ্পত্তি— ব্রাজিলের ২-০ ব্যবধানের জয়।

ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দল । এক্স
ম্যাচের ২৮তম মিনিটে গোলের সূচনা করে ব্রাজিল। গোলটির পেছনে ছিল অভিজ্ঞ কাসেমিরোর বুদ্ধিদীপ্ত অংশগ্রহণ। সেনেগালের অর্ধে জায়গা খুঁজছিলেন তিনি। নিজের পাসটি নিয়াখাতে’র গায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে চলে যায় ডি-বক্সে দাঁড়িয়ে থাকা এস্টেভাও-র সামনে।
মাত্র ১৭ বছর বয়সী এই চেলসি তারকা প্রথম ছোঁয়াতেই যে মানের শট নিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে টপ-ক্লাস। বাঁকানো শটটি গোলরক্ষককে দাঁড়িয়ে দেখিয়ে দূরের কোণে জড়িয়ে যায়।
এই গোলের মধ্য দিয়ে ব্রাজিল পায় গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু—
ব্রাজিল ১-০ সেনেগাল।
এর মাত্র সাত মিনিট পরই দেখা মেলে ব্রাজিলের দ্বিতীয় গোলের। এবার গোলদাতা অভিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য কাসেমিরো। তবে গোলটির বড় কৃতিত্ব অবশ্যই রদ্রিগোর।
রদ্রিগো প্রথমে কোউলিবালির ফাউল আদায় করে ফ্রি-কিক পেয়ে যান। এরপর তিনিই নেন সেই সেট-পিস। নিখুঁত, মাপা একটি ক্রস তুলে দেন ব্যাক পোস্টে থাকা কাসেমিরোর কাছে।
দারুণ প্রথম টাচে বল নিয়ন্ত্রণে এনে ডি-বক্সের ভেতর থেকে বাঁ দিকের কোণে দুর্দান্ত শটে বল পাঠান তিনি। গোলরক্ষক কোনোভাবেই তা থামাতে পারেননি।
ব্রাজিল ২-০ সেনেগাল।
ফ্রি-কিক আদায়, নিখুঁত ক্রস এবং গোলের সূচনা— সব মিলিয়ে রদ্রিগোই এ গোলের স্থপতি। প্রথমার্ধে ব্রাজিলের দাপট ছিল পরিষ্কার। তরুণ-অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে গড়া এই দলটি আক্রমণভাগে ছিল তীক্ষ্ণ, রক্ষণে ছিল সংগঠিত। সেনেগাল কয়েকটি আক্রমণের চেষ্টা করলেও কোনোভাবেই ব্রাজিলের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে উঠতে পারেনি।
আরও পড়ুনঃ
ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬: ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডসহ বাকি ২৮ দল যারা
বাংলাদেশ বনাম ভারত প্রিভিউ: এশিয়ান কাপ ২০২৭ বাছাইপর্বে সম্ভাব্য একাদশ ও ম্যাচ বিশ্লেষণ
বিরতির পর শুরু হওয়া দ্বিতীয়ার্ধে খেলার গতি কিছুটা কমে আসে। প্রথমার্ধে দুই গোল পাওয়ার পর ব্রাজিল স্বাভাবিকভাবেই রক্ষণ ও বল দখল কেন্দ্রিক ফুটবলে মনোযোগ দেয়। অন্যদিকে পিছিয়ে থাকা সেনেগাল আক্রমণে উঠতে চাইলেও ধারাবাহিকতা বা বিপজ্জনক কোনো হুমকি তৈরি করতে পারেনি।
পুরো দ্বিতীয়ার্ধে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল— কোনো দলই লক্ষ্যভেদী শট নিতে সক্ষম হয়নি।
এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে সেনেগালের আক্রমণভাগে প্রয়োজনীয় ধার ছিল না, আর ব্রাজিল রক্ষণভাগে ছিল যথেষ্ট সংগঠিত ও আত্মবিশ্বাসী।
সাদিও মানে, ইসমাইলা স্যার কিংবা এনদিয়ায়ে— কেউই ব্রাজিলের রক্ষণ ভাঙতে পারেননি। মাঝেমধ্যে লং-বল বা ডাইরেক্ট খেলায় চেষ্টা করলেও মার্কিনিয়োস ও মিলিতাওয়ের নেতৃত্বে ব্রাজিলের ডিফেন্স সহজেই সেগুলো প্রতিহত করে। গোলরক্ষক এডারসনকেও দ্বিতীয়ার্ধে তেমন পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়নি।
ব্রাজিলও আক্রমণে খুব আগ্রাসী ছিল না। রদ্রিগো, ভিনিসিয়ুস বা কুনহা মাঝে মাঝে কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে এসেও সেনেগালের চূড়ান্ত তৃতীয়াংশে পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। তবে বল দখলে আধিপত্য বজায় রেখে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতেই রেখেছে সেলেসাওরা।
স্ট্যাটিসটিক্সও দ্বিতীয়ার্ধের চিত্রকে স্পষ্ট করে:
বিরতির পর দুই দলই একটিও অন-টার্গেট শট নিতে পারেনি, অথচ পুরো ম্যাচের এক্সপেক্টেড গোল (xG) তুলনাই বলে দেয় প্রভাব কার বেশি ছিল—
ব্রাজিলের xG ১.৬৭, যেখানে সেনেগালের ছিল ০.৮১।
শেষ মুহূর্তেও ম্যাচের গতিপথ বদলানোর মতো কোনো আক্রমণ তৈরি করতে না পেরে সেনেগালকে গোলশূন্য হতাশায়ই ফিরতে হয়, আর ব্রাজিল প্রথমার্ধের দুই গোলই ধরে রেখে নিশ্চিত করে নেয় দাপুটে জয়।