বিশ্বকাপের প্লে-অফে জায়গা করে নিতে রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডকে জয়ের বিকল্প ছিল না। বুদাপেস্টের পুসকাস অ্যারেনায় হাঙ্গেরির বিপক্ষে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টানটান উত্তেজনায় ভরপুর এক ম্যাচে ঠিক সেই কাজটাই করে দেখাল হেইমির হালগ্রিমসনের দল। আর এই রূপকথার নায়ক ছিলেন ট্রয় প্যারট—যিনি ম্যাচের প্রায় শেষ স্পর্শে পূর্ণ করলেন দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক!
পর্তুগালের বিপক্ষে ২-০ গোলের অবিশ্বাস্য জয় এনে নিজেদের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিল আয়ারল্যান্ড। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই হাঙ্গেরির মাঠে নেমেছিল তারা, কিন্তু শুরুটা হলো একদম বিপরীত। ম্যাচের মাত্র চতুর্থ মিনিটেই ড্যানিয়েল লুকাকসের মাথা থেকে জাল কাঁপিয়ে এগিয়ে যায় হাঙ্গেরি। ভিএআর চেকের পরেও সিদ্ধান্ত বহাল থাকে, আর আয়ারল্যান্ডের সামনে কঠিন পথচলা শুরু হয়।
তবে গোল হজমের পর আয়ারল্যান্ড দমে যায়নি। বল দখল, আক্রমণ—সবকিছুতেই ফিরতে চেষ্টা করে। সেই চেষ্টার ফল তাদের হাতে আসে পেনাল্টির মাধ্যমে। চিয়েদোজি ওগবেনেকে বক্সে ফেলে দিলে স্পটকিক পায় আয়ারল্যান্ড এবং নির্ভুল শট নিয়ে ম্যাচে সমতা ফেরান ট্রয় প্যারট।
কিন্তু প্রথমার্ধে আবারও ধাক্কা খায় অতিথিরা। বার্নাবাস ভারগা দুর্দান্ত এক বাঁ-পায়ের শটে হাঙ্গেরিকে আবারও লিড এনে দেন। ফলে বিরতিতে যাওয়ার আগে ম্যাচটি যেন আবার হাঙ্গেরিরই নিয়ন্ত্রণে।
দ্বিতীয়ার্ধ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন গল্প। পর্তুগালের বিপক্ষে প্রচুর শক্তি খরচ করায় ক্লান্তি থাকলেও আয়ারল্যান্ড লড়াই চালিয়ে যায় শেষ পর্যন্ত। অ্যাডাম ইদাহর একটি গোল অফসাইডে বাতিল হলেও মনোযোগ হারায়নি তারা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণের ধারও বাড়তে থাকে।

গেটি ইমেজ
শেষ ১০ মিনিটের সময় এসে আবারও দৃশ্যপটে ট্রয় প্যারট। ডিফেন্সের ফাঁক গলে নিখুঁত চিপ শটে ম্যাচে ২-২ সমতা ফেরান তিনি। সেই মুহূর্ত থেকেই ম্যাচ পুরোপুরি খোলা হয়ে যায় এবং মাঠে-গ্যালারিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর বদলি হিসেবে নামা জনি কেনির শটটি ঠেকিয়ে দেন হাঙ্গেরি গোলরক্ষক দেনেস ডিবুস। মনে হচ্ছিল ম্যাচটি হয়তো ড্র-ই হতে পারে—কিন্তু ভাগ্যের লেখা ছিল অন্যরকম।
৯৬তম মিনিট—শেষ দিকের কর্নারে দীর্ঘ বলটি হেডে বাড়িয়ে দেন লিয়াম স্কেলস। ঠিক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রয় প্যারট ডিবুসের আগে পা ছুঁইয়ে বলটি জালে পাঠান। আর তাতেই পুসকাস অ্যারেনা স্তব্ধ, আয়ারল্যান্ড শিবিরে উন্মাদ উল্লাস। এই হ্যাটট্রিকের মাধ্যমে প্যারট হয়ে গেলেন ২০১৪ সালের পর প্রথম আইরিশ খেলোয়াড়, যিনি কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে তিন গোল করলেন।
হাঙ্গেরির জন্য এটি নির্মম হতাশা। ডমিনিক সোবোসলাইয়ের নেতৃত্বাধীন দলটি ১৯৮৬ সালের পর আর বিশ্বকাপের মূলপর্বে ফিরতে পারেনি—সেই অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হলো।
অন্যদিকে গ্রুপের অন্য ম্যাচে পর্তুগাল ৯–১ গোলের বিশাল জয়ে আর্মেনিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে নিশ্চিত করেছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নশিপ ও বিশ্বকাপের টিকিট।
এই অবস্থানে আসাটাই আয়ারল্যান্ডের জন্য অপ্রত্যাশিত সাফল্য। প্রথম তিন ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট—আর আর্মেনিয়ার বিপক্ষে পরাজয় ছিল পুরো ক্যাম্পেইনের সবচেয়ে হতাশার দিন। সেখান থেকে টানা আর্মেনিয়া ও পর্তুগালকে হারিয়ে আবারও নিজেদের জীবন্ত রাখে দলটি।
বুদাপেস্টেও শুরুতে বিপাদের মুখে পড়লেও আয়ারল্যান্ডের লড়াই থেমে যায়নি এক মুহূর্তের জন্য। হালগ্রিমসনের আক্রমণাত্মক কৌশল, তিন ফরোয়ার্ড নামানোর সিদ্ধান্ত এবং খেলোয়াড়দের প্রাণপণ লড়াই শেষ পর্যন্ত তাদের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দেয়।
বিশেষ করে গোলরক্ষক কাওইমহিন কেলার ছিলেন দুর্দান্ত। হাঙ্গেরির রোলান্ড সালাইয়ের দুটি নিশ্চিত সুযোগ ঠেকিয়ে ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে টিকিয়ে রাখেন তিনি। তার এই অবদান ছাড়া ম্যাচের গতিপথ ভিন্ন হতে পারত।
আরও পড়ুনঃ
ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬: ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডসহ বাকি ২৮ দল যারা
ব্রাজিলের খেলা কবে: সেনেগাল ও তিউনিসিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে আনচেলত্তির সেলেসাও
ম্যাচ শেষে ট্রয় প্যারট বলেন,
“পর্তুগালের বিপক্ষে যা হয়েছিল, সেটা আমার ক্যারিয়ারের সেরা রাত ছিল বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু আজকের রাত? আমার মনে হয়, জীবনে আর কোনোদিন এমন মুহূর্ত পাব না। এটা একেবারেই রূপকথা। স্বপ্নেও হয়তো ভাবতাম না এমন কিছু।”
কোচ হালগ্রিমসন যোগ করেন,
“শুরুর দিকে আমরা নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু ছেলেরা শেষ পর্যন্ত যেভাবে লড়েছে, সেটা প্রশংসার যোগ্য। তিন ফরোয়ার্ড নামানো ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, কিন্তু তারা সুযোগ কাজে লাগিয়েছে।”