ফুটবলের ময়দানে বাংলাদেশের এবং ভারতের লড়াই সবসময়ই কেবল মাত্র খেলাধুলা নয়, বরং আঞ্চলিক গৌরব, দলগত মনোবল ও ইতিহাসের এক তীব্র প্রতিযোগিতা হিসেবে গড়ে ওঠে। তাই যেমন তুমি বলেছ, “বাংলাদেশ বনাম ভারত ফুটবলে কিংবা ক্রিকেটে মুখোমুখি হবে আর উত্তাপ ছড়াবেনা, তা হবেনা” — সেটাই পুরোপুরি সত্যিই প্রতিফলিত হলো ১৮ নভেম্বর ২০২৫-এর এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে।

ফাইল ছবি
এই দিনটি বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে স্মরণের মতো এক মুহূর্ত হিসেবে জমা হয়ে থাকবে: ২২ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে ভারতকে ১–০ গোলে হারালো স্বাগতিক দল। মাত্র ১১ মিনিটেই সহজ কিন্তু কার্যকর পাল্টা-আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। রাকিব হোসেন বাম ফ্ল্যাঙ্ক থেকে এক চমৎকার পাস পাঠায় মোরসালিনের দিকে, যিনি একে মেপে রাখেন এবং ভারতের গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিং সান্ধুর দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বলটিকে কোণায় স্থাপন করেন।
এই গোলটা শুধু স্কোরবোর্ডে পরিবর্তন এনে দেয়নি — তা ছিল মনোবল এর এক বিশাল ঝাঁকা। প্রথমার্ধ শেষ করার আগেই বাংলাদেশ ঐ লিড ধরে রাখে, এবং বিরতির সাইডে দল সবেমাত্র মাঠ ছেড়েছে, কিন্তু গ্যালারি উল্লাসে ফেটে পড়েছে।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য ভারত ফিরে আসার চেষ্টা করেছিল। তারা আক্রমণে সচেষ্ট ছিল, মিডফিল্ডে দবালো চাপে রাখার পরিকল্পনা হাতে রাখে, কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ও গোলরক্ষক মিতুল মারমা একে একে সব চ্যালেঞ্জ সামলায়। মিতুল মারমার প্রতি খুব বেশি সমালোচনা ছিল আগে, তবে এই ম্যাচে তার গ্লাভসই বাংলাদেশকে স্থির রেখেছিল এবং ভারতের সমতা ফেরানোর সুযোগটাকে কাজে লাগতে দেয়নি। এই জয়ের তাৎপর্য মাত্র একটা ম্যাচ জেতা বলেই সীমাবদ্ধ নয় — এটি ছিল আত্মবিশ্বাস ও মর্যাদার ফেরার প্রতীক। দীর্ঘদিন ধরেই ভারতকে হারাতে না পারার লড়াইটা একটা মানসিক বাধা হিসেবে ছিল। কিন্তু আজকে সেই বাধা ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ, এবং গ্যালারির সমর্থকরা, খেলোয়াড়রা সবাই একসাথে আনন্দের ঢেউতে ভাসলেন।
আরও পড়ুনঃ আর্মেনিয়াকে ৯-১ গোলে বিধ্বস্ত করে পর্তুগাল বিশ্বকাপের মূল পর্বে
কোচ হাভিয়ের কাবরেরা এবং তার স্টাফের পরিকল্পনাও জয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা শুধু আক্রমণাত্মক ব্যাক-কাউন্টারই ব্যবহার করেনি, বরং দলের রক্ষণ ও মাঝমাঠকে এমনভাবে সাজিয়েছিল যাতে ভারতের আক্রমণ গুছিয়ে প্রতিহত করা যায়। সেই পরিকল্পনা মাঠে সাফল্য পেয়েছে, এবং বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা স্ব স্ব দায়িত্বে দ্রুত ও মানসিক দৃঢ়তা দেখিয়েছে।
সামাজিক ও জাতীয় গুরুত্বও এর থেকে কম ছিল না। ভারতের বিপক্ষে এই জানাপড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেবল এক খেলার ইস্যু নয় — এটি বাংলাদেশের ফুটবল গর্ব, আঞ্চলিক পার প্রমাণ এবং জাতীয় দৃষ্টিকোণের প্রতিফলন। গ্যালারিতে প্রায় প্রতিটি কোণে অনুভব করা গিয়েছিল, দর্শকরা একসাথে ট্রিবিউন ভরিয়ে ওঠে, তাদের আত্মবিশ্বাস এবং ভালোবাসা ফুটবলের প্রতি স্পষ্ট ভাষায় বলছিল।
সুতরাং, তুমিই ঠিক বলেছ — শুধু ম্যাচ মাত্র খেলাটা না, উত্তাপ, আবেগ, গৌরব ও লড়াই সবই ছিলো। আজকের এই দিনটি বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় হিসেবে লেখা হয়েছে — একবার ভারতকে পরাজিত করার গৌরব, দীর্ঘ প্রতীক্ষার ম্লান আশা ফিরে পাওয়া, এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা