ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নিজের প্রথম ম্যাচে ২ মিনিটে গোল দিয়ে এগিয়ে গিয়েও জয় এনে দিতে ব্যর্থ হন নতুন কোচ রুবেন আমোরিম। প্রিমিয়ার লিগে ইপসউইচ টাউনের বিপক্ষে সেই ম্যাচটি শেষ হয়েছিল ১–১ গোলে ড্রয়ে। তবে দলের পারফরম্যান্সে উন্নতির আশা নিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে নামেন আমোরিম। গতকাল ইউরোপা লিগে নরওয়ের ক্লাব বোডো/গ্লিমটের বিপক্ষে ম্যাচে ইউনাইটেড শুরু থেকেই দেখিয়েছে আগ্রাসী ফুটবল।
গতকাল জোড়া গোল করে হইলুন্দ | ছবি: রয়টার্স
ম্যাচের প্রথম মিনিট শেষ হওয়ার আগেই আলেহান্দ্রো গারনাচোর গোলে এগিয়ে যায় ‘রেড ডেভিল’রা। এই গোলের মাধ্যমে ক্লাবটি স্মরণ করিয়ে দিল ৩৩ বছর আগের এক বিশেষ মুহূর্ত। ১৯৯১ সালের পর প্রথমবারের মতো কোনো ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় ১ মিনিট পার হওয়ার আগেই গোল পেল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ম্যাচের বাকি সময়েও নাটকীয়তা ছিল চরমে। শেষ পর্যন্ত ৩–২ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা।
ওল্ড ট্রাফোর্ডে এই জয় সহজ ছিল না। শুরুতে এগিয়ে গেলেও ২৩ মিনিটের মধ্যেই ২–১ গোলে পিছিয়ে পড়ে ইউনাইটেড। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতায় রাসমুস হইলুন্দ দলের নায়ক হয়ে ওঠেন। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে এবং দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে তার জোড়া গোলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইউনাইটেড। শেষ পর্যন্ত তারা জয় নিশ্চিত করে, তবে ম্যাচটি তাদের জন্য ছিল কঠিন পরীক্ষা।
ম্যাচের প্রথম মিনিটেই গোল করেছেন গারনাচো | ছবি: রয়টার্স
তবু দলটির পারফরম্যান্সে এখনো বেশ কিছু ঘাটতি রয়ে গেছে। কোচ রুবেন আমোরিমও তা মেনে নিয়েছেন। খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়া এবং কৌশলগত দিক নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তিনি। ম্যাচ শেষে টিএনটি স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমোরিম বলেন, “আমি এখনো উদ্বিগ্ন, কারণ আমরা এই মুহূর্তে অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। আমি খেলোয়াড়দের পুরোপুরি চিনি না, এবং তাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য তেমন সময়ও পাইনি। আমাদের ম্যাচগুলো রোমাঞ্চকর হলেও স্নায়ুচাপে ভুগতে হয়, কারণ নিশ্চিত হতে পারি না ফলাফল কী হবে।”
তবে খেলোয়াড়দের মানসিকতায় আশার আলো দেখছেন তিনি। আমোরিম বলেন, “আমরা ভালো শুরু করেছিলাম, যদিও পরে দুটি গোল খেয়ে সমস্যায় পড়েছিলাম। তবে খেলোয়াড়রা যেভাবে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে, তা আমার ভালো লেগেছে। তারা তাদের সেরাটা দিয়েছে, আর এই জয় তাদের প্রাপ্য ছিল।”
আরও পড়ুন: নেশন্স লিগ: কোয়ার্টার ফাইনালে রোনালদো-এমবাপ্পেদের প্রতিপক্ষ কারা?
এদিকে, ইউনাইটেডে এসে নিজের অভিজ্ঞতার কথাও শেয়ার করেন আমোরিম। ক্লাব সমর্থকদের কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসায় মুগ্ধ তিনি। ম্যাচের সময় তার জন্য তৈরি করা গান তাকে আবেগপ্রবণ করেছে। তিনি বলেন, “এটা আমার জন্য বিশেষ কিছু। আমি পর্তুগাল থেকে এসেছি এবং এখানের অর্ধেক সমর্থক আমাকে হয়তো চিনেও না। তবু তারা যেভাবে আমাকে গ্রহণ করেছে, তা সত্যিই হৃদয়গ্রাহী।”
এই জয় সত্ত্বেও, আমোরিম এবং তার দলকে এখনো অনেক দূর এগোতে হবে। বিশেষ করে প্রিমিয়ার লিগ এবং ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিক ভালো পারফরম্যান্স দিতে হলে কৌশলগত উন্নয়ন এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে সমন্বয় আরও বাড়ানোর বিকল্প নেই। তবে ইউনাইটেডের এই জয় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে, এবং কোচের নতুন কৌশলগুলো ধীরে ধীরে কার্যকর হতে পারে বলে আশা করছেন সমর্থকেরা।
প্রসঙ্গত:
এই ম্যাচে পাওয়া জয় শুধু ইউনাইটেডের নয়, বরং নতুন কোচের কৌশলের ওপর ভরসা রাখার এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। দলটি প্রিমিয়ার লিগে হতাশাজনক ফলের পর ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। ইউনাইটেডের ভক্তদের আশা, কোচ আমোরিম শীঘ্রই দলটিকে তাদের সেরা ছন্দে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন।