বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ১১তম আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল ও দুর্বার রাজশাহী মুখোমুখি হয়। দুই দলের মধ্যে প্রায় ৪শ রানের জমজমাট লড়াই হয়, যার শেষ হাসি হেসেছে ফরচুন বরিশাল। বিপিএলে অনেকদিন পর ফিরে আসা রাজশাহী প্রথমে এগিয়ে থাকলেও শেষ মুহূর্তে ৪ উইকেটে হারতে হয়। ফরচুন বরিশাল ৪ উইকেটের লড়াকু জয় দিয়ে তাদের বিপিএল অভিযান শুরু করেছে।
বড় রান তারা করে জয় ছিনিয়ে নিল বরিশাল | ছবিঃ সংগৃহীত
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৯৭ রান সংগ্রহ করে দুর্বার রাজশাহী। জবাবে, ফরচুন বরিশাল শুরুতে বেশ কয়েকটি উইকেট হারিয়েও শেষ পর্যন্ত ১১ বল ও ৪ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
এদিন ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় রাজশাহী। দলীয় ৫ রানে ডাক মেরে ফেরেন তরুণ ওপেনার জিসান আলম। দলীয় ২৫ রানের মাথায় আরেক ওপেনার মোহাম্মদ হ্যারিসও ফিরে যান। এই পাকিস্তানি তারকার ব্যাট থেকে আসে ২২ বলে ১৩ রান। দুই ওপেনারকে হারানোর পর, অধিনায়ক এনামুল বিজয় ও ইয়াসির আলি রাব্বির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় রাজশাহী। দুজনে ৮৭ বলে গড়েন ১৪০ রানের বড় জুটি। বিজয় ৬৫ রানে আউট হলেও ইয়াসির রাব্বি খেলেন শেষ ওভার পর্যন্ত। ৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করা এই ব্যাটার ৪৭ বলে ৯৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন।
ফরচুন বরিশালের হয়ে বল হাতে দুর্দান্ত ছিল কাইল মায়ার্স। ৩ ওভারে মাত্র ১৩ রান খরচায় ২টি উইকেট শিকার করেছেন এই পেসার। এছাড়া ফাহিম আশরাফ নিয়েছেন এক উইকেট। তবে বল হাতে ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়েও কোনো উইকেটের দেখা পাননি পাক তারকা শাহীন শাহ আফ্রিদি। যদিও তিনি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দলকে সমর্থন দেন এবং প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই ওপেনার শান্তকে হারায় ফরচুন বরিশাল। গোল্ডেন ডাক মেরে ফিরে যান এই ওপেনার। এরপর ঝড়ো শুরুর আভাস দিয়ে ফিরে যান আরেক ওপেনার তামিম ইকবালও (৭)। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার কাইল মায়ার্সও। দলীয় ৩০ রানের মাথায় ফিরে যান এই ব্যাটার।
তবে হৃদয় এক প্রান্তে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেও মুশফিক ফেরার পর তিনিও প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। তার ব্যাট থেকে আসে ৩২ রান। দলীয় ৬১ রানে পাঁচ ব্যাটারকে হারিয়ে বিপাকে পড়ে ফরচুন বরিশাল। তবে তারকায় ঠাসা ফরচুন বরিশাল তবুও দমে যায়নি। প্রত্যাবর্তনের শুরুটা করেন শাহীন আফ্রিদি। ১৭ বলে ২৭ রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেলে দলকে দারুণ এক পজিশনে রেখে যান এই তারকা।
অপরপ্রান্তে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শাহীন ফিরে যাওয়ার পরও জয়ের থেকে অনেক দূরে ছিল ফরচুন বরিশাল। তবে এক পাকিস্তানি ফেরার পর আরেক পাক অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ এসে ম্যাচের চিত্র বদলে দেন। তার পাশাপাশি মাহমুদউল্লাহও দেখান তার বুড়ো বয়সের ভেলকি। সপ্তম উইকেটে ৩৫ বলে ৮৮ রানের বিধ্বংসী জুটি গড়ে ১১ বল হাতে রেখেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ফাহিম ২১ বলে ৫৪ এবং মাহমুদউল্লাহ ২৬ বলে ৫৬ রান করে অপরাজিত ছিলেন।
রাজশাহীর হয়ে ৪ ওভারে ৩১ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। এছাড়া হাসান মুরাদ ২টি এবং জিসান আলম একটি উইকেটের দেখা পেয়েছেন। তবে শেষের দিকে ফরচুন বরিশালের অলরাউন্ডাররা তাদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে রাজশাহীর বোলিং লাইনআপকে কার্যত পরাস্ত করে।
ফরচুন বরিশালের এই জয়ের মাধ্যমে তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল। দলের পারফরম্যান্সে বড় ভূমিকা ছিল ফাহিম আশরাফের অপ্রতিরোধ্য ইনিংস এবং মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বগুণের। তারা নিজেদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে ম্যাচের পরিস্থিতি পাল্টে দেন এবং এক দুর্দান্ত জয় তুলে নেন।
রাজশাহীর বিরুদ্ধে এই জয়ের পর, ফরচুন বরিশাল তাদের শিরোপার প্রতিযোগিতায় আরও শক্তিশালীভাবে ফিরে এসেছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
দুর্বার রাজশাহী: ১৯৭/৩ (২০ ওভার)
ফরচুন বরিশাল: ২০০/৬ (১৮.১ ওভার)
ফলাফল: ফরচুন বরিশাল ৪ উইকেটে জয়ী