ঢাকা ক্যাপিটালসকে নিয়ে প্রত্যাশার চাপ বেশিই ছিল। কারনটা খেলার জগতের কোন মানুষকে নিয়ে নয়,ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিক সুপারস্টার শাকিব খানের। বাংলার এই মেগাস্টার ক্ষ্যাত শাকিব খান উপস্থিত ছিলেন প্লেয়ার্স ড্রাফটেও।
বহুবার প্রেসের সামনে দল নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। দলটি হেরেছে টানা ৪ ম্যাচে। দলের বেহাল দশা দেখে হয়তো সেই আশা এখন আর না থাকাটাই সম্ভব।
আজ চা বাগানের দেশ সিলেটে রংপুরের বিপক্ষে ম্যাচে নিজের ৪র্থ হার দেখে ঢাকা। সবচেয়ে বড় কথা, মাঠে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারছে না ঢাকা। এরকম পরিস্থিতিতে শাকিব খান এভাবে বললেও বলতে পারেন—প্রচারণায় তো কোনো কমতি ছিলনা,তবে কি ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’র মতো মাঠেও কি আমাকেই খেলতে হবে নাকি!
বোল্ড তানজিদ | ছবিঃ শামসুল হক
প্রকৃতপক্ষে সেটা হয়তো শাকিব বলবেন না। মাঠের খেলাটা অবশ্য ক্রিকেটারদেরই খেলতে হবে। তো এই মাঠের খেলাটাই কেন ঢাকা ক্যাপিটালসের খেলোয়াররা ঠিকঠাক খেলতে পারছেন না? এতটা মুখ থুবড়ে পড়েছে কেন? নির্দিষ্ট কোনো কারণ বলা মুশকিল। ঢাকা যে মুখ থুবড়ে পড়ছে ব্যাটিং-বোলিং সব বিভাগেই!
ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়ভার আসে ওপেনার তানজিদ হাসান ও লিটন দাসের ওপর। জাতীয় দলের এই দুই পরিচিত মুখ যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছেন কে কতটা ব্যর্থ হতে পারেন তা প্রমাণ করতে! টুর্নামেন্টে তানজিদের সর্বোচ্চ রান মাত্র ৩০, আর লিটনের ৩১। আজ ওপেনিং থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও রান পাননি দুজনের কেউই।
যাঁদের পারফরম্যান্সে এখন বিপিএল মাতানো উচিত, সেই শাহাদত হোসেন ও হাবিবুর রহমানও হতাশ করে চলেছেন। প্রথম ম্যাচ খেলার পর আজ দলে ফিরেছিলেন হাবিবুর, কিন্তু করতে পেরেছেন মাত্র ১২ রান। আর শাহাদত তো আজ একাদশেই জায়গা পাননি। অন্যদিকে দলে নেওয়া হয়েছিল অভিজ্ঞ সাব্বির রহমান ও মোসাদ্দেক হোসেনকে। তাঁদেরও পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক।
এই দলের অধিনায়ক থিসারা পেরেরা, যিনি তাঁর সেরা সময় কাটিয়ে এসেছেন বহু আগেই। নিয়মিত খেলার মতো অবস্থায় নেই তিনি। খুলনার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করলেও আজ শূন্য রানে আউট হয়েছেন। বড় নাম জেসন রয়ও আজ ব্যর্থ। সম্মিলিত ব্যর্থতার ফলেই রংপুরের বিপক্ষে ঢাকার সংগ্রহ মাত্র ১১১ রান, যা এবারের বিপিএলে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন স্কোর।
বোলিং আক্রমণের কথা বললে মোস্তাফিজুর রহমান ও মুকিদুল আছেন, তবে ১১১ রানের মতো কম সংগ্রহ নিয়ে তাঁরা আর কী করতে পারেন? এবারের বিপিএলে ১৮০ রানও নিরাপদ নয়। রংপুর এই লক্ষ্য পার করেছে ৪০ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখেই। এটি তাদের টানা পঞ্চম জয়। আজিজুল তামিমের ব্যাট আজও হাসেনি,ফিরেছেন মাত্র ১৪ বলে ৫ করে। আলেক্স হেলস ৪৪(২৭),সাইফ হাসান ১৩(১৫) করে সাজঘরে ফিরলে ২ পাকিস্তানি ব্যাটার ইফতিখার ৯*(১২) ও খুশদিল শাহ ২৭*(১৩) ম্যাচ শেষ করে ফিরেন।
ম্যাচসেরা রংপুরের পেসার নাহিদ রানা | ছবিঃ প্রথম আলো
এই দলের বোলিং আক্রমণে সহায়তা করার মতো বিশেষ কোনো খেলোয়াড় নেই। বোলারদের নাম শুনলেই বিষয়টি পরিষ্কার—আলাউদ্দিন বাবু, শুভম রঞ্জন, থিসারা পেরেরা।
তবে কি ঢাকার নাম কিংবা কোচই দোষের কারণ? গত মৌসুমে ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম ছিল দুর্দান্ত ঢাকা। কিন্তু দলটি প্রথম ম্যাচ জয়ের পর টানা ১১টি ম্যাচ হেরেছিল। এবারও তারা টানা ৪ ম্যাচে হেরেছে। সব মিলিয়ে দুই ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খালেদ মাহমুদের কোচিংয়ে টানা ১৫টি ম্যাচ হেরেছে ঢাকা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা ক্যাপিটালস: ১১১/১০ (তানজিদ ২০, রয় ১৮; নাহিদ রানা ৩/২১, আকিফ ২/১৩)।
রংপুর রাইডার্স: ১১৩/৩ (হেলস ৪৪, খুশদিল ২৭*; মোস্তাফিজুর ১/২৩, মোসাদ্দেক ১/১৩)।
ফল: রংপুর ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: নাহিদ রানা।