নতুন বছর শুরুর স্বপ্ন থাকে সবার, আর সে স্বপ্নের সঙ্গে থাকে নানান পরিকল্পনা। ভিনিসিয়ুস জুনিয়রেরও নিশ্চয়ই তেমন কিছু পরিকল্পনা ছিল। মাঠে বছরের প্রথম ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখতে গোল পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তো ছিলই। তবে গোলের আনন্দের বদলে ভিনি পেলেন লাল কার্ড, আর তা সরাসরি!
ভ্যালেন্সিয়ার গোলকিপার দিমিত্রিয়েভস্কিকে আঘাত করেন ভিনিসিয়ুসরয়টার্স
এতেও থেমে থাকেননি ভিনি। রেফারির প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দেওয়ার সময় মনে হচ্ছিল, যেন আরেক নাটক শুরু হলো মাঠে। যেভাবে রেফারির দিকে তেড়ে গিয়েছিলেন, যদি রুডিগার তাঁকে না থামাতেন, কী ঘটত বলা মুশকিল। ভ্যালেন্সিয়া গোলকিপার স্টোল দিমিত্রিয়েভস্কির ঘাড়ে আঘাত করার জন্য যে লাল কার্ড দেখলেন, সেটি কোনো ফুটবলীয় কারণে ছিল না। বরং এটি ভিনির মেজাজ হারানোরই ফল।
তবুও, রিয়াল মাদ্রিদ নতুন বছরটা ঠিকই ভালোভাবেই শুরু করেছে। ভ্যালেন্সিয়ার মাঠ মেস্তায়ায় লা লিগার ম্যাচে ২-১ গোলে জয় পেয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল। অথচ দলের সেরা তারকা ভিনিসিয়ুসের নতুন বছরের শুরুটা হলো মেজাজ হারানো, প্রতিপক্ষকে আঘাত করা, লাল কার্ড দেখা, এবং শেষে দুঃখপ্রকাশের মধ্য দিয়ে। ফিফা ‘বেস্ট’জয়ী হওয়া তো দূরের কথা, পৃথিবীর কোনো সাধারণ ফুটবলারেরও বছর শুরু এমনভাবে হোক, কেউ চাইবে না। কিন্তু নিয়তির খেলা, ভিনির ক্ষেত্রেই তা ঘটে গেল।
আরও পড়ুনঃ মেসিরা দীর্ঘ ১৩ বছর পর বাংলাদেশে আসছে: আপনি জানেন কি?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিনি তাঁর কৃতকর্মের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তবে কেবল কিছু নির্বাচিত শব্দে, যা ভ্যালেন্সিয়ার সমর্থকদের মধ্যে প্রশ্ন তুলতে পারে—ভিনির অনুশোচনার গভীরতা আসলে কতটুকু? স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘দুঃখিত এবং দলকে ধন্যবাদ।’
মেস্তায়া স্টেডিয়ামের সঙ্গে ভিনির সম্পর্ক এমনিতেই খুব একটা ভালো নয়। ২০২৩ সালের মে মাসে এখানেই বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়ে মেজাজ হারিয়ে লাল কার্ড দেখেছিলেন। এর আগেও একই মাঠে দর্শকদের কাছ থেকে বর্ণবাদী মন্তব্য শুনেছেন। এবারও মেস্তায়াতেই ঘটে গেল আরেকটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা—তাঁর রিয়াল ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় লাল কার্ড।
আঘাত পেয়ে মাটিতে পড়ে যান ভ্যালেন্সিয়ার গোলকিপার দিমিত্রিয়েভস্কিরয়টার্স
রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি অবশ্য ভিনির এই লাল কার্ড মেনে নিতে পারছেন না। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা মনে করি, এটি লাল কার্ডের ঘটনা ছিল না, দুটি হলুদ কার্ড যথেষ্ট ছিল।’ কোচ জানিয়েছেন, তারা লা লিগার কাছে এই কার্ডের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। আনচেলত্তির আশা, ভিনি পরের ম্যাচ খেলতে পারবেন। তবে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারটি নির্ভর করছে ম্যাচ রেফারি সিজার সোটো গ্রাদোর আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদনের ওপর।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ম্যাচের ৭৬ মিনিটে। ভ্যালেন্সিয়ার বক্সে পড়ে গিয়ে পেনাল্টির আবেদন করেন ভিনি। সেই সময় ভ্যালেন্সিয়ার গোলকিপার দিমিত্রিয়েভস্কি পেছন থেকে এসে ভিনির চুল টেনে দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ভিনি দিমিত্রিয়েভস্কির ঘাড়ে দুই হাতে আঘাত করেন। সাবেক রেফারি এদুয়ার্দো ইতুরালদে জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী মুখে আঘাত করার শাস্তি সরাসরি লাল কার্ড।
রেফারি ভিএআর মনিটরে দেখে সরাসরি ভিনিকে লাল কার্ড দেখান। রেফারির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ভিনি তেড়ে যান তাঁর দিকে। সতীর্থ রুডিগার এবং দানি সেবায়াস দ্রুত তাঁকে শান্ত করে টানেলের দিকে নিয়ে যান। ভিনির আচরণ মারাত্মক হিসেবে গণ্য হলে নিষেধাজ্ঞা চার ম্যাচ পর্যন্ত গড়াতে পারে। তবে বিষয়টি হালকা হিসেবে দেখা হলে হয়তো শাস্তি দুই-তিন ম্যাচে সীমাবদ্ধ থাকবে।
এমন এক নাটকীয় শুরুর পর, ভিনিসিয়ুস নিশ্চয়ই বাকি বছরটা অন্যভাবে চালিয়ে যেতে চাইবেন। তবে ফুটবলে আবেগের লাগাম টানাটাও যে বড় চ্যালেঞ্জ, তা হয়তো এই ম্যাচেই আবার প্রমাণিত হলো।