লা লিগার ইতিহাসে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর লড়াই মানেই “এল ক্লাসিকো”। আজ আবার সেই মহারণে মুখোমুখি হবে স্পেনের দুই ফুটবল দৈত্য — রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে রোববার (২৬ অক্টোবর) রাত ৯টা ১৫ মিনিটে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। কোটি কোটি দর্শকের চোখ থাকবে এই লড়াইয়ে, যেখানে গ্যালাকটিকোদের সামনে থাকবে নতুন চেহারার এক বার্সা।

কে হবেন জয়ের নায়ক? লামিন নাকি এমবাপ্পে | গেটি ইমেজ
এল ক্লাসিকো মানেই তীব্র উত্তেজনা, আবেগ, ও কৌশলের লড়াই। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। দুই দলেরই লক্ষ্য পরিষ্কার — জয় এবং লিগ টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রাখা।

ভিনি ও এমবাপ্পে আক্রমণ জুটি | গেটি ইমেজ
জাবি আলোনসোর নেতৃত্বে রিয়াল মাদ্রিদ দুর্দান্ত ছন্দে আছে। এমবাপে ও ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের জুটি প্রতিপক্ষের রক্ষণে দুঃস্বপ্ন তৈরি করছে। মিডফিল্ডে বেলিংহাম আগের মতোই ছন্দে আছেন, আর টচুয়ামেনি করছেন নিখুঁত ডিফেন্স কভার। গোলপোস্টে কুর্তোয়া ফিরেছেন ইনজুরি থেকে, যা দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে বহুগুণে।
তবে ডিফেন্স লাইনে রুডিগার ও আলাবার ইনজুরি কিছুটা চিন্তার কারণ। মিলিতাও ও হুইজেনকে তাই অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে হবে।

লামিনকে কে আটকাবে? | গেটি ইমেজ
বার্সেলোনার অবস্থা কিছুটা ভিন্ন। ইনজুরিতে ভুগছেন দলের মূল তারকা লেওয়ানডভস্কি, রাফিনিয়া, গাভি ও অলমো। ফলে তরুণদের ওপরই ভরসা রাখতে হচ্ছে কোচ মার্কাস সার্গকে।
তরুণ লামিনে ইয়ামাল এবং পেদ্রি এখন দলের প্রাণভোমরা। ডি ইয়ং-এর পাসিং এবং রাশফোর্ডের গতিময়তা রিয়ালের ডিফেন্সে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
তবে রক্ষণভাগে এরিক গার্সিয়া ও কুবারসি কতটা টিকে থাকতে পারেন এমবাপে-ভিনিসিয়ুসদের সামনে, সেটাই বড় প্রশ্ন।
এমবাপে বনাম আরাউহো: ফরাসি তারকার গতি ও ড্রিবলিং সামলানো সহজ হবে না।
বেলিংহাম বনাম ডি ইয়ং: দুই মিডফিল্ডারের লড়াই মাঝমাঠের দখল নির্ধারণ করবে।
পেদ্রি বনাম টচুয়ামেনি: পেদ্রির সৃজনশীলতা ঠেকাতে টচুয়ামেনিকে রাখতে হবে সর্বোচ্চ মনোযোগ।
জাবি আলোনসো পজিশন-ভিত্তিক ফুটবলে জোর দেন, তবে সুযোগ পেলে দ্রুত কাউন্টারেও মারাত্মক। অন্যদিকে মার্কাস সার্গ মূলত তরুণদের ব্যবহার করে দ্রুত আক্রমণ গড়ে তুলতে চান। তবে ইনজুরি-সঙ্কটে বার্সা বেঞ্চের বিকল্প খুবই সীমিত।
এই কারণেই ম্যাচে রিয়ালের আক্রমণ ও পজিশন-দখল দুই দিকেই সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কুর্তোয়া (গোলরক্ষক); ভালভার্দে, মিলিতাও, হুইজেন, কারেরাস; টচুয়ামেনি, বেলিংহাম; গুলার, এমবাপে, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র; মাস্তান্তুয়ানো
কোচ: জাবি আলোনসো
ইনজুরি আপডেট:
আন্তোনিও রুডিগার (পা’য়ের ইনজুরি – ফিরবেন নভেম্বরের শুরুতে)
ডেভিড আলাবা (পেশির ইনজুরি – সন্দেহে আছেন)
সেজনি (গোলরক্ষক); আরাউহো, কুবারসি, এরিক গার্সিয়া, বালদে; ডি ইয়ং, লোপেজ; ফেরান, পেদ্রি, লামিনে ইয়ামাল; রাশফোর্ড
কোচ: মার্কাস সার্গ
ইনজুরি ও সাসপেনশন:
হান্স-ডিটার ফ্লিক (সাসপেন্ডেড), আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেন, জোয়ান গার্সিয়া, মারক-আন্দ্রে টার স্টেগেন, দানি অলমো, গাভি, রাফিনিয়া, রবার্ট লেওয়ানডভস্কি
রিয়াল মাদ্রিদ ১–০ জুভেন্টাস
গেটাফে ০–১ রিয়াল মাদ্রিদ
রিয়াল মাদ্রিদ ৩–১ ভিয়ারিয়াল
কাইরাত আলমাটি ০–৫ রিয়াল মাদ্রিদ
আতলেতিকো মাদ্রিদ ৫–২ রিয়াল মাদ্রিদ
🟢 জয়: ৪ 🔴 পরাজয়: ১
আরো পড়ুন: নেইমার কি আর ফিরবেন ব্রাজিলের জার্সিতে? | বিশ্বকাপ ২০২৬-এ নেইমার থাকবে তো?
বার্সেলোনা ৬–১ অলিম্পিয়াকোস
বার্সেলোনা ২–১ জিরোনা
সেভিয়া ৪–১ বার্সেলোনা
বার্সেলোনা ১–২ পিএসজি
বার্সেলোনা ২–১ রিয়াল সোসিয়েদাদ
🟢 জয়: ৩ 🔴 পরাজয়: ২
বর্তমান ফর্ম, হোম অ্যাডভান্টেজ ও স্কোয়াড গভীরতা — সবকিছু বিবেচনা করলে রিয়াল মাদ্রিদই এগিয়ে।
বার্সেলোনার আক্রমণ আগের মতো ধারালো নয়, আর রক্ষণেও আছে দুর্বলতা।
সম্ভাব্য ফলাফল: রিয়াল মাদ্রিদ ৩–১ বার্সেলোনা
সম্ভাব্য গোলদাতা: এমবাপে, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, বেলিংহাম | পেদ্রি
উত্তর: এই দুই ক্লাব সাধারণত স্পেনিশ লা লিগা, স্প্যানিশ সুপার কাপ বা কোপা দেল রে র মতো প্রতিযোগিতায় মুখোমুখি হয়। উদাহরণ হিসেবে, লা লিগার রাউন্ড ১০ এ তারা ২৬ অক্টোবর ২০২৫-এ রাত ৯:১৫ নাগাদ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে মুখোমুখি হবে।
এই ধরনের বড় ম্যাচের সময় ও তারিখ আগেই ঘোষণা করা হয়, তাই অনুরাগীরা আগে থেকে প্রস্তুত থাকতে পারে।
উত্তর: ঐতিহাসিকভাবে এই দুই দলের মধ্যে হিমশিম খাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এক উৎস বলছে রিয়াল মাদ্রিদ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে প্রায় ১০৫ জয় পেয়েছে, বার্সেলোনার জয় রয়েছে প্রায় ১০৪-এর আশেপাশে, এবং ড্র হয়েছে প্রায় ৫২ বার।
এই কারণে ম্যাচটি “খুব একটা প্রাসঙ্গিক” হয়ে ওঠে — এই রেকর্ড দিয়েই বোঝা যায় দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কতটা ঘনিষ্ঠ।
উত্তর: আপনি এই মহা মহরণটি দেখতে পারবেন ইএসপিএন ও ইএসপিএন প্লাসে। তবে আপনাকে সাবসক্রিপশবন কিনে ম্যাচটি উপভোগ করতে হবে। তাছাড়া ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফরমে দেখা যেতে পারে।
উত্তর: বর্তমান মেয়াদে দুই দলেই উঠানামা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:
রিয়াল: শেষ ৫ ম্যাচে জিতেছে চারটি, হারেছে একটি।
বার্সেলোনা: শেষ ৫ ম্যাচে জিতে এসেছে তিনটি, হারে দুইটি।
এই রেকর্ড দেখে বোঝা যায় যে রিয়াল এই মুহূর্তে সামান্য শক্তিশালী রূপ নিচ্ছে।
তবে ফর্ম বর্তমানে থাকবে গুরুত্বপূর্ণ — কারণ ছোট ভুলও বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
উত্তর: হ্যাঁ — বেশ কয়েকটি বিষয় রয়েছে যা আজকের ম্যাচে নজর রাখা জরুরি:
হোম মাঠের সুবিধা: রিয়াল মাদ্রিদ নিজ মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রয়েছেন, যা বড় সুবিধা।
ইনজুরি ও রপ্তানী: বার্সেলোনার বেশ কিছু মূল খেলোয়াড় ইনজুরিতে আছেন বা সাসপেন্ডেড রয়েছেন, যা তাদের স্কোয়ার গভীরতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
খেলার গতিপথ: গত কয়েকটি ম্যাচে গোলের সংখ্যা বেশি হয়েছে — অর্থাৎ অনেকটা খোলা ও আগ্রাসী ফুটবল দেখার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই কারণে ম্যাচটি শুধুই ফলের লড়াই নয়; কৌশল, মানসিকতা ও প্রস্তুতির লড়াইও থাকবে।
এই ম্যাচটি শুধু লা লিগার পয়েন্ট টেবিল নয়, দুই দলের মান-অভিমান, মর্যাদা ও ইতিহাসের লড়াই।
একদিকে গ্যালাকটিকোদের রাজত্ব ফিরিয়ে আনতে চায় রিয়াল, অন্যদিকে তরুণদের নিয়ে পুনর্জন্মের পথে বার্সেলোনা।
আজকের এল ক্লাসিকো তাই কেবল একটি ম্যাচ নয় — এটি বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের যুদ্ধ।