উরুগুয়ের মাঠে সেই এক ধাক্কা যেন নেইমারের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ২০২৩ সালের অক্টোবর—বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে উরুগুয়ের মিডফিল্ডার নিকোলাস দে লা ক্রুজের সঙ্গে সংঘর্ষে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হন নেইমার। বাঁ পায়ের লিগামেন্ট ও মিনিসকাস ছিঁড়ে যাওয়ায় তাঁকে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয় কাঁদতে কাঁদতে। সেই দৃশ্যটাই এখন পর্যন্ত ব্রাজিলের জার্সিতে তাঁর শেষ উপস্থিতি।

নেইমার ইঞ্জুরি হয়েছেন ২ বছর হলো | ছবিঃ গেটি ইমেজ
এরপর কেটে গেছে দুই বছর। নেইমার ফেরার লড়াই চালিয়ে গেলেও পুরোপুরি ফিট হতে পারেননি। কোচ কার্লো আনচেলত্তি বহুবার বলেছেন—“জাতীয় দলের দরজা নেইমারের জন্য খোলা।” কিন্তু সঙ্গে যোগ করেছেন শর্তও, “শতভাগ ফিট না হলে জাতীয় দলে ফেরা সম্ভব নয়।”
এই কথাই যেন এখন নেইমারের সবচেয়ে বড় বাধা।

নেইমার নিজেকে প্রস্তুত করে নিচ্ছেন | ছবিঃ নেইমার ইন্সটাগ্রাম
বিশ্বকাপের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। ব্রাজিল ইতিমধ্যে প্রীতি ম্যাচ খেলে দল গোছাতে শুরু করেছে। ভিনিসিয়ুস, রাফিনিয়া, রদ্রিগোরা দলে নিজেদের জায়গা পাকা করেছেন। নেইমারের অনুপস্থিতিতে গোল করার দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন সবাই। পরিসংখ্যান বলছে—নেইমার চোট পাওয়ার পর ব্রাজিল ২৪ ম্যাচে ১০ জয়, ৮ ড্র ও ৬ পরাজয় পেয়েছে। গোল করেছে ৩৭টি। অর্থাৎ নেইমারকে ছাড়াও দল এগোচ্ছে নিজেদের ছন্দে।
তবু প্রশ্ন থেকেই যায়—নেইমার কি আর ফিরতে পারবেন জাতীয় দলে?
‘ও গ্লোবো’র তথ্য বলছে, গত ৭৩১ দিনের মধ্যে ৫২৯ দিনই মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। চোটের কারণে সময়ের প্রায় ৭২ শতাংশই খেলতে পারেননি। এমন অবস্থায় আনচেলত্তির মতো বাস্তববাদী কোচ কি তাঁকে বিশ্বকাপের দলে রাখবেন?
বিশ্লেষক কার্লোস মানসুরের মতে, নেইমারের সমস্যা শুধুই শারীরিক নয়—কৌশলগত দিকেও পিছিয়ে পড়ছেন তিনি। “শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা আর ম্যাচ ফিট থাকা এক জিনিস নয়,” বলছেন মানসুর। “নেইমার মাঠে প্রভাব ফেলতে পারছেন না, প্রতিপক্ষকে ভাঙার সেই তেজ আর দেখা যায় না।”
একজন প্লেমেকার হিসেবে তাঁর ড্রিবলিং ও মুভমেন্ট এখন আগের মতো কার্যকর নয়। ফলে সতীর্থরাও তাঁর ওপর আগের মতো ভরসা করতে পারছেন না।
আনচেলত্তির বর্তমান ছকে উইং থেকে দুইজন ভেতরে ঢুকে আক্রমণ গড়ে তোলেন, আবার মাঝখানের খেলোয়াড়রা প্রান্তে চলে যান। নেইমার এই ফরমেশনে জায়গা পেতে হলে হয় উইংয়ে খেলতে হবে, নয়তো মিডফিল্ডে নতুন রোল নিতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো—নেইমার এখন আর নিয়মিত উইঙ্গার নন। সান্তোসে ফিরে মাত্র ২১ ম্যাচ খেলেছেন, গোল করেছেন ৬টি, করিয়েছেন ৩টি। ধারাবাহিকতা নেই, ফিটনেসও প্রশ্নবিদ্ধ।

কারলো আঞ্চেলত্তি | ছবিঃ রয়টারস
ব্রাজিলের সাংবাদিক লিওনার্দো মিরান্দা মনে করেন, “নেইমার একজন ১০ নম্বর খেলোয়াড়, কিন্তু বর্তমানে ভিনি ও কুনিয়া সেই জায়গা দখল করে ফেলেছে। এখনকার দলে তাঁকে নেওয়া মানে নতুন করে ঝুঁকি নেওয়া।”
এই কথাগুলোই বাস্তবতা বোঝায়—নেইমার হয়তো এখনো বিশ্বের অন্যতম প্রতিভাবান ফুটবলার, কিন্তু সময়ের স্রোত তাঁকে ধীরে ধীরে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে।
সবশেষে প্রশ্নটা আবারও ঘুরে আসে—২০২৬ বিশ্বকাপে নেইমারকে কি দেখা যাবে?
সমর্থকদের হৃদয়ে এখনো আশার প্রদীপ জ্বলে। তবে সময় কিন্তু একদমই নেইমারের পক্ষে নয়। হয়তো তিনি আবার ফিরবেন, কিন্তু সেই ‘পুরনো নেইমার’কে দেখা যাবে কি না, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় রহস্য।