বাংলাদেশ দল আজ মাঠে নেমেছিল শুধুই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নয়, বরং জয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে (Ban vs Ind)। খেলার শুরু থেকেই স্পষ্ট ছিল যে, তারা ভারতের বিরুদ্ধে কোনো রকম রক্ষণাত্মক মানসিকতা নিয়ে নামেনি। বরং নিজেদের খেলায় আস্থা রেখে, দারুণ হাই প্রেসিং ফুটবল খেলে স্বাগতিক দলকে চাপে রেখেছে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে, শেষ মুহূর্তের ফিনিশিং দুর্বলতা আবারও কাঙ্ক্ষিত জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, ফলে এক পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।
ভারতের লিস্টন কোলাচোর সঙ্গে বল দখলের লড়াই বাংলাদেশের হামজা চৌধুরীর | এআইএফএফ
এই ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল ব্যতিক্রমী। অ্যাওয়ে ম্যাচে ভারতকে তাদের মাঠেই কোণঠাসা করে খেলাটা সহজ কাজ নয়, অথচ আজ তা বাস্তব হয়েছে। বিশেষ করে, মাঝমাঠের শক্তিশালী উপস্থিতি ও দ্রুতগতির আক্রমণের কারণে ভারতের রক্ষণভাগ দুশ্চিন্তায় ছিল পুরো ম্যাচ জুড়ে। তবে গোলের সামনে এসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সামান্য ভুলের কারণে বিজয়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে।
মাঠের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলো কেড়েছেন হামজা চৌধুরী। তার উপস্থিতি শুধু রক্ষণভাগকে দৃঢ় করেছে তা নয়, পুরো দলকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রেখেছে। প্রতিটি ট্যাকল, বল কভারেজ, এবং খেলার ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা প্রমাণ করেছে কেন তিনি দলের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ। অভিষেক ম্যাচেই তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশ ফুটবলে তার অবদান কেমন হতে চলেছে। শুধু ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে নয়, বরং খেলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবেও তিনি দারুণ কার্যকর ছিলেন। সতীর্থদের নির্দেশনা দেওয়া, খেলার গতি বাড়ানো, এবং প্রতিপক্ষের পাসিং লেন বন্ধ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো তিনি করেছেন অসাধারণভাবে।
রাকিব হোসেনের পারফরম্যান্সও ছিল অনন্য। তার প্রেসিংয়ের কারণে ভারতের রক্ষণভাগ বারবার চাপে পড়েছে। বিশেষ করে, গোলরক্ষকের ওপর লাগাতার প্রেসিংয়ের মাধ্যমে তিনি কয়েকটি দারুণ সুযোগ তৈরি করেছিলেন। অন্যদিকে, ফাহিমও শেষ মুহূর্তে গোলের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন, কিন্তু ভারতের গোলরক্ষকের দুর্দান্ত সেভের কারণে তা সফল হয়নি।
ফলাফল হয়তো প্রত্যাশিত জয় এনে দেয়নি, তবে এই পারফরম্যান্স নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ভারতের মাঠে, হাজারো প্রতিপক্ষ সমর্থকের সামনে দাঁড়িয়ে এমন দাপুটে ফুটবল খেলা সহজ নয়। তবুও বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, তারা এখন আর পিছিয়ে পড়া দল নয়—তাদের মধ্যে বড় কিছু করে দেখানোর সামর্থ্য আছে।
এই ম্যাচ শুধুমাত্র একটি ড্র নয়, বরং এক নতুন সম্ভাবনার বার্তা। বাংলাদেশ ফুটবল এখন উন্নতির পথে রয়েছে, এবং এই দলের মধ্যে সেই জেদ রয়েছে যা ভবিষ্যতে আরও বড় সাফল্য এনে দিতে পারে। শুধু ফিনিশিংয়ে আরও উন্নতি করতে হবে, সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে আরও নিখুঁত হতে হবে।
হামজা চৌধুরীর অভিষেকের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন একটি অধ্যায় শুরু হলো। আশা করি, এই পারফরম্যান্স সামনের দিনগুলোতে আরও শক্তিশালী হবে, সিন্ডিকেটের বাইরে বেরিয়ে এসে সত্যিকারের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের বিকাশের সুযোগ তৈরি হবে। এক নতুন বাংলাদেশের ফুটবল দেখতে চাই আমরা—যেখানে গর্ব করার মতো সাফল্য বারবার ধরা দেবে!