
ওয়াশিংটন ডিসিতে ৫ ডিসেম্বর বসছে ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের ড্র। সেখান থেকেই শুরু হবে নিউ জার্সির আইকনিক মেটলাইফ স্টেডিয়ামে শিরোপা লড়াইয়ের সম্ভাব্য পথচিত্র আঁকা।
এবারের বিশ্বকাপ হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আসর—যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো মিলিয়ে ১৬টি ভেন্যু, মোট ৪৮ দল এবং ১০৪টি ম্যাচ।
ছয়টি জায়গা এখনও খালি—চারটি ইউরোপিয়ান প্লে-অফে এবং দুটি আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফে নির্ধারিত হবে।
তবে অধিকাংশ ফেভারিট দল ইতোমধ্যেই নিশ্চিত। মেসির আর্জেন্টিনা শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্ন দেখছে, ১৯৬২ সালের পর প্রথমবারের মতো টানা দুই বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে।
ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড, ব্রাজিলদের মতো শক্তিশালী দলগুলোর পাশাপাশি আয়োজক তিন দেশও নিজেদের ছাপ রাখতে মরিয়া। আর নরওয়ের হয়ে এরলিং হালান্ডের মতো গোলমেশিনের উপস্থিতি টুর্নামেন্টকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
অপ্টা সুপারকম্পিউটার জানিয়েছে প্রথম দফার সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নের তালিকা। দেখা যাক, কার সুযোগ সবচেয়ে বেশি।
আরও পড়ুনঃ
ফিফা অনূর্ধ্ব–১৭ বিশ্বকাপ ফাইনাল ২০২৫: প্রথমবার পর্তুগাল জয়ী
ইউরো ২০২৪-এ চোখ ধাঁধানো ফুটবল খেলেই আবারও সবার ওপরে উঠে এসেছে লুইস দে লা ফুয়েন্তের স্পেন।
৭ ম্যাচে ৬টিতেই ৯০ মিনিটে জিতেছে তারা, গোল করেছে প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ ১৫টি।
স্পেন এখন টানা ৩১টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে অপরাজিত—যা তাদের ২০১০-১৩ সময়কার স্বর্ণযুগকেও ছাড়িয়েছে।
লামিন ইয়ামাল ও নিকো উইলিয়ামস—এই দুই তরুণ উইঙ্গারের ঝলক টিমটিকে আরও ভয়ংকর করে তুলেছে। বিশেষ করে ইয়ামাল ইউরোতে সর্বোচ্চ ১৯টি সুযোগ তৈরি করেছিলেন, যা তার ১৭ বছর বয়সে সত্যি অদ্ভুত।
তবে রদ্রি, পেদ্রি, গাভির ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু তারা সুস্থ থাকলে স্পেন আবারও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারে—অপ্টার হিসেবে সম্ভাবনা ১৭ শতাংশ।
২০২৬ বিশ্বকাপ দিয়েই শেষ হবে দিদিয়ের দেশঁর যুগ। ১৪ বছরের দায়িত্বে তিনি ফ্রান্সকে নিয়ে গেছেন এক নতুন উচ্চতায়।
২০১৮ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর কাতারেও ফাইনাল খেলেছে দলটি।
এবার নেতৃত্ব দেবেন কিলিয়ান এমবাপ্পে—যিনি ইতোমধ্যেই ফ্রান্সের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা (৫৫ গোল)।
বিশ্বকাপে মাত্র দুই আসরে ১২ গোল করে ফেলেছেন তিনি—ক্লোসের ১৬ গোলের রেকর্ডের খুব কাছে।
ফর্মের তুঙ্গে আছেন ওসমান দেম্বেলে—২০২৫ ব্যালন ডি’অর জয়ী।
দেম্বেলে ও এমবাপ্পেকে একই সিস্টেমে কিভাবে খেলাবেন, সেটাই সবচেয়ে বড় ধাঁধা।
তবুও ১৪.১% সম্ভাবনা নিয়ে তারা স্পেনের ঠিক নিচে দ্বিতীয় ফেভারিট।
৬০ বছরের শিরোপা খরা ঘোচাতে থমাস টুখেলকে দায়িত্ব দিয়েছে ইংল্যান্ড।
টুখেল দারুণভাবে শুরু না করলেও কোয়ালিফায়ারে ইংল্যান্ড ৮ ম্যাচে ৮ জয় ও ৮ ক্লিনশিট—এটা ইউরোপীয় বাছাই ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বার।
দলে ফর্মে আছেন হ্যারি কেন—এই মৌসুমে বায়ার্নের হয়ে ২০ ম্যাচে ২৪ গোল।
নতুন ফুটবল আইডিয়ায় টুখেল দারুণ আগ্রাসী ও গতিময় ইংল্যান্ড বানানোর চেষ্টা করছেন।
জুড বেলিংহাম, ফিল ফোডেন, কোলে পামার, ইজে—অসাধারণ সব আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারদের নিয়ে দলটি এখন ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী স্কোয়াড।
১১.৮% সম্ভাবনায় তারা তৃতীয় ফেভারিট।
মেসি ২০২২ সালে একাই যেন লিওনেল স্কালোনির দলের পথ দেখিয়েছিলেন।
৭ গোল, ৩ অ্যাসিস্ট—কাতারে সর্বোত্তম ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সগুলোর একটি।
মেসির নামের পাশে এখন বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উপস্থিতি (২৬), সর্বোচ্চ গোল সম্পৃক্ততা (২১), এবং সবচেয়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের রেকর্ড।
MLS–এও ভয়ংকর ফর্মে আছেন তিনি—৩৫ গোল + ২১ অ্যাসিস্ট।
আর্জেন্টিনা বাছাইয়ে একচেটিয়া আধিপত্য দেখিয়েছে, কোপা আমেরিকাও টানা দ্বিতীয়বার জিতেছে।
তবে ইউরোপের বড় দলগুলোর বিপক্ষে সাম্প্রতিক পরীক্ষার অভাব ও ডি মারিয়ার অবসর কিছুটা ধাক্কা হতে পারে।
তবুও মেসি থাকলে কিছুই অসম্ভব না—তাদের সম্ভাবনা ৮.৭%।
টানা দুই বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর জার্মানি আবারও শিরোপার দাবিদার হিসেবে ফিরছে—৭.১% সম্ভাবনা নিয়ে।
নাগেলসম্যানের দল ইউরো ২০২৪–এ দারুণ ফুটবল খেলেছিল—৬২% পজিশন, ১১ গোল।
সাম্প্রতিক বাছাইয়ে শেষ ম্যাচে স্লোভাকিয়াকে ৬-০ হারিয়ে শীর্ষস্থান নিশ্চিত করেছে।
গোরেৎসকার সঙ্গী হিসেবে নবাগত পাভলোভিচ দারুণ খেলছেন।
তবে টের স্টেগেনের ফর্ম ও মিডফিল্ড জুটির জায়গা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
তবুও তারা পট–১ এ থাকায় তুলনামূলক সহজ ড্র পাওয়া নিশ্চিত—তাই জার্মানিকে বাদ দেওয়া ভুল হবে।
২০২২ বিশ্বকাপের পর ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো সৌদি আরবের আল–নাসরে যোগ দেওয়ায় অনেকেই ভেবেছিল তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার হয়তো ঢলে পড়বে। কিন্তু ৪০ বছর বয়সেও তার গোল ক্ষুধা যেন কমছেই না—সৌদি লিগে ৮৬ ম্যাচে ৮৪ গোল করেছেন তিনি।
ফিফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে লাল কার্ডের কারণে রোনালদোকে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা ভোগ করতে হবে না। অর্থাৎ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকেই মাঠে নামতে পারবেন তিনি।
পর্তুগাল দলে প্রতিভার কমতি নেই—ভিতিনিয়া, জোয়াও নেভেস, নুনো ম্যান্ডেস PSG–তে দুর্দান্ত মৌসুম কাটিয়েছেন। ডিফেন্সে রুবেন দিয়াস, মিডফিল্ডে ব্রুনো ফার্নান্দেজ ও বের্নার্দো সিলভা—অভিজ্ঞ ও স্কিলফুল খেলোয়াড়দের দারুণ মিশ্রণ।
তবে বড় প্রশ্ন হচ্ছে—রোনালদোকে দলে রেখে সঠিক ভারসাম্য তৈরি করতে পারবেন কি না কোচ রোবের্তো মার্তিনেজ।
২০২২ বিশ্বকাপে রোনালদো ছন্দে ছিলেন না, সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে বেঞ্চে রেখে খেলানো হলে তার পরিবর্তে গনসালো রামোস হ্যাটট্রিক করেছিলেন।
ইউরো ২০২৪–এও রোনালদোর ২৩টি শট থেকেও একটি গোল হয়নি।
তারপরও রোনালদোকে কখনও বাতিল করা যায় না—পর্তুগালের সম্ভাবনা ৬.৬%।
বিশ্বকাপ ইতিহাসে একমাত্র দল যারা প্রতিটি আসরে খেলেছে—এই ব্রাজিলই এবার বাছাইয়ে ধুঁকেছে।
অ্যানচেলোত্তির অধীনে শেষ পাঁচ ম্যাচে তারা হেরেছে বলিভিয়া ও জাপানের কাছে, ড্র করেছে তিউনিসিয়া ও ইকুয়েডরের সঙ্গে।
আগামী বছর হলে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ খরা দাঁড়াবে ২৪ বছরে—১৯৯৪ থেকে ২০২২-এর মধ্যে একবারও তারা এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেনি।
ব্রাজিলকে আবার আগের রূপে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব এখন কার্লো অ্যানচেলোত্তির কাঁধে। আর তার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা।
রিয়াল মাদ্রিদে অ্যানচেলোত্তির অধীনে ভিনিসিয়ুস সবচেয়ে সফল, তার ১৯২ গোল সম্পৃক্ততার ১৪৯টি এসেছে এই কোচের দ্বিতীয় মেয়াদে।
নতুন সুপারস্টার এস্তেভাও চেলসিতে জমকালো শুরু করেছেন, যা ব্রাজিলের ডান প্রান্তকে আরও কার্যকর করতে পারে।
এখনো নিশ্চিত নয়, ইনজুরিতে ভোগা নেইমারকে দলে রাখা হবে কিনা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রাজিল নকআউট পর্বে ব্যর্থ—টানা দুই বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায়, কোপা আমেরিকাতেও ব্যর্থতা।
তবুও অ্যানচেলোত্তির মতো টুর্নামেন্ট-স্পেশাল কোচ কিছু করে দেখাতে পারেন—তাদের সম্ভাবনা ৫.৬%।
বিশ্বকাপ ইতিহাসে তিনবার ফাইনাল খেলেও কখনো শিরোপা না জেতার আক্ষেপ সবচেয়ে বেশি যে দেশের—তা হলো নেদারল্যান্ডস।
রোনাল্ড কোম্যান দায়িত্ব নিয়ে দলটিকে আবার ঐতিহ্যবাহী ৪-৩-৩ সিস্টেমে ফিরিয়েছেন, আর তাতেই মিলেছে সাফল্যের ঝলক।
ইউরো ২০২৪–এ তারা সেমিফাইনাল খেলেছিল, ইংল্যান্ডের কাছে শেষ মুহূর্তে হেরে।
দলের বড় সমস্যা ছিল টার্গেট স্ট্রাইকার। তবে মেমফিস ডিপাই এখন দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা—৫১ গোল।
বাছাইপর্বে লিথুয়ানিয়ার বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে চারজন প্রিমিয়ার লিগ খেলোয়াড় গোল করেন—রেইন্ডার্স, গাকপো, সিমন্স ও মালেন। এটি নেদারল্যান্ডস ফুটবল ইতিহাসেও একটি বিরল ঘটনা।
দলে তারকা কম থাকলেও নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা ও সমন্বয় দুর্দান্ত—তাই সুপারকম্পিউটারের মতে ৫.২% সম্ভাবনা নিয়ে তারা অষ্টম ফেভারিট।