
বাংলাদেশকে রান তাড়ায় দুর্বল হিসেবে ধরা হলেও চট্টগ্রামে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা গেল। পাওয়ার প্লের জোরালো সূচনা, মাঝের ওভারে স্থিরতা, আর শেষ দিকে ঠাণ্ডা মাথার হিসাব—সব মিলিয়ে এই ম্যাচে আর ভুল করেনি লিটনরা। আয়ারল্যান্ডের দেওয়া ১৭১ রানের লক্ষ্য তারা ২ বল হাতে রেখেই ছুঁয়ে ফেলে এবং তিন ম্যাচের সিরিজে ১–১ সমতায় ফেরে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সফল রান তাড়া। এর আগে ২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ের ১৬৩ রান ছিল দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ তাড়া করা স্কোর। আর সামগ্রিক রেকর্ডে শীর্ষে আছে ২০১৮ সালের কলোম্বোর ২১৪–রান তাড়া করে পাওয়া জয়।
ইনিংসের শুরু থেকেই বাংলাদেশ ইতিবাচক ব্যাটিং করে। দুই ওভারে ওঠে ২০ রান। ম্যাথু হামফ্রিসের করা প্রথম ওভারে পারভেজ হোসেন চার–ছক্কা মিলিয়ে তুলে নেন ১০ রান। তবে দ্রুতই বিপত্তি—রান নেওয়ার ভুল সিদ্ধান্তে রানআউট হন তানজিদ হাসান। ব্যারি ম্যাকার্থির সরাসরি থ্রোতে ১০ বলে ৭ রান করে ফেরেন তিনি।
উইকেট পড়লেও রানের গতি কমতে দেয়নি বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে দলের সংগ্রহ হয় ৬৬, যা আয়ারল্যান্ডের ৭৫ রানের খুব কাছাকাছি। পারভেজ–লিটনের ৬০ রানের জুটি দলকে স্থিরতা দেয়। ৫ চার ও ২ ছয়ে ২৮ বলে ৪৩ করা পারভেজকে ফেরান গ্যারেথ ডেলানি।
আরও পড়ুনঃ
২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: দেখুন পুরো সময়সূচি ও ভেন্যু
১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ৮৬/২। এরপর লিটনকে সঙ্গ দেন সাইফ হাসান। জশ লিটলের ওভারে দুজনই জীবন পেলেও লিটন সুযোগ হাতছাড়া করেননি। হামফ্রিসকে ছক্কা মেরে অর্ধশতক পূর্ণ করেন তিনি—এটি তার আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ১৬তম ফিফটি। ৩৭ বলে ৫৭ রান করে মার্ক অ্যাডাইরের বলে এলবিডব্লু হয়ে ফেরেন লিটন।
১৫ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে ১৩৮/৩। পরের ওভারে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন সাইফ (১৭ বলে ২২)। এরপর রানআউটে তাওহিদ হৃদয় (৯ বলে ৬) ফিরে গেলে চাপ বাড়ে। নুরুল হাসান সোহানকেও তুলে নেন অ্যাডাইর।
তবে সাইফউদ্দিনের গুরুত্বপূর্ণ ছক্কা–চার ম্যাচকে বাংলাদেশের দিকেই টেনে আনে। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল মাত্র তিন রান, যা দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি মেরে নিশ্চিত করেন মেহেদী হাসান।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে আয়ারল্যান্ড শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল। মেহেদীর প্রথম ওভারেই ওঠে ১৩, নাসুমের ওভার থেকে আসে ১৪ রান। তৃতীয় ওভারের এক বল পর ফ্লাডলাইটের সমস্যায় খেলা ১০ মিনিট বন্ধ থাকলেও আইরিশদের আগ্রাসন থামেনি। পাওয়ার প্লেতে তারা তুলে ফেলে ৭৫ রান—টি–টোয়েন্টিতে তাদের তৃতীয় সর্বোচ্চ, এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ।
স্টার্লিং ১৪ বলে ২৯ রানে ফিরলেও টিম টেক্টর (২৫ বলে ৩৮) আক্রমণ চালিয়ে যান। কিন্তু মেহেদী হাসানের একই ওভারে টিম ও হ্যারি টেক্টর দুজনই ফিরে গেলে গতি হারায় আয়ারল্যান্ড। ১০ ওভারে তাদের সংগ্রহ হয় ৯৭/৩। এরপর বিন কালিৎজও মেহেদীর শিকার হলে উইকেটের চাপ বাড়ে।
টাকার–ডকরেল জুটি ৫৬ রান যোগ করে ইনিংস সামলে তোলেন। ডকরেল ২১ বলে ১৮ করে ফিরলে আবার ধাক্কা লাগে। টাকার ইনিংসের শেষ বলে রানআউট হওয়ার আগে করেন ৩২ বলে দলের সর্বোচ্চ ৪১ রান।
বাংলাদেশের সেরা বোলার ছিলেন মেহেদী হাসান—৪ ওভারে মাত্র ২৫ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট।